চোখের সুরক্ষার বিষয়টি অবহেলা করছেননা তো?
মানব দেহের সবথেকে সংবেদনশীল অঙ্গ চোখ। দৈনন্দিন জীবনে সকল কর্ম ব্যস্ততার প্রভাব পড়ে আমাদের চোখের উপর। দীর্ঘ সময় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার, কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে অসতর্কতা, বাইরের ধুলাবালি, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি, এসব কিছুই চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। কিন্তু এসবের কোনটাই পুরোপুরি ভাবে এড়িয়ে চলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে যা সম্ভব তা হল, এ সকল ক্ষেত্রে নিজেদের মূল্যবান চোখকে সুরক্ষিত রাখতে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা।
তাহলে আসুন আজকে জেনে নেয়া যাক চোখের সুরক্ষায় করণীয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ।
১। আলোর সঠিক মাত্রা
চোখ যদিও যেকোন ধরনের আলোর সাথে কিছু সময়ের মধ্যেই মানিয়ে নিতে পারে, কিন্তু চোখ ভালো রাখতে অতি তীব্র বা কম আলোতে লেখাপড়া বা অন্যান্য কাজ করা উচিত নয়। টিউবলাইট এর আলো চোখের জন্য আরামদায়ক, তবে অনেকে কিছু পড়ার সময় টেবিল ল্যাম্প ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সেক্ষেত্রে ল্যাম্পটি দেয়ালের দিকে রেখে প্রতিফলিত আলোতে পড়া ভালো।
২। ব্লু ফিল্টার লেন্স বা গ্লাস ব্যবহার
স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের স্ক্রিন থেকে বের হওয়া ব্লু লাইট একটানা দীর্ঘ সময় চোখে গেলে, তা চোখে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা করতে পারে বলে জানাচ্ছেন ডাক্তাররা। সেক্ষেত্রে ব্লু ফিল্টার গ্লাস আমাদের চোখে কম্পিউটার স্ক্রিনের নীল আলোর প্রভাব পড়া থেকে অনেকটা সুরক্ষিত রাখে ।
অনেককে প্রশ্ন করতে দেখা যায়, দিনের বেলা কম্পিউটারে কাজের সময় ব্লু ফিল্টার চশমার দরকার আছে কিনা। যদিও দিনে স্ক্রিন থেকে আসা এই ব্লু লাইটের প্রভাব কিছুটা কম থাকে, তারপরেও বিশেষজ্ঞরা সার্বক্ষণিক এই ব্লু ফিল্টার গ্লাস ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
৩। টেলিভিশন ও কম্পিউটারের মনিটর থেকে চোখের দূরত্ব
কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির আকারের ওপর এগুলো থেকে চোখের দূরত্ব কেমন হবে তা নির্ভর করে। তবে সাধারণত কম্পিউটারের মনিটর থেকে চোখের ডিসটেন্স ৩ ফুট এবং টেলিভিশন থেকে ১০ ফুট হওয়া জরুরি। বিভিন্ন ক্ষতিকর রে থেকে নিজেদের চোখ প্রটেক্ট করতে অবশ্যই এই নিয়ম মেনে চলা উচিত।
৪। সানগ্লাস ব্যবহার
সানগ্লাস যেমন রোদ থেকে চোখকে সুরক্ষিত রাখে তেমনি ফ্যাশন স্টেটমেন্টেও যোগ করে আলাদা মাত্রা। তপ্ত রোদ, গরম বাতাস, সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রে (UV rays), বাতাসে থাকা ধূলিকণার আক্রমণের শিকার হয় আমাদের চোখ। এতে চোখের কর্নিয়া ও রেটিনা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি দেখা দিতে পারে সাইনাস ও মাইগ্রেনের মতো সমস্যা।
সানগ্লাস এর অনেক ধরণ আছে। এর মধ্যে রোদ থেকে চোখ এবং স্কিনকে সেফ রাখতে অ্যাভিয়েটর, ব্রোলিন, রেট্রো, রাউন্ড, ওয়েফেয়ারার এর মত সানগ্লাস সবথেকে বেশি উপযোগী।
৫। কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে সর্তকতা
ফ্যাশন প্রেমীদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চশমার পরিবর্তে কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহার। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। একটানা দীর্ঘ সময় (৮ ঘণ্টার বেশি) কন্টাক্ট লেন্স পড়ে থাকা উচিত নয় এবং ঘুমানোর আগেই অবশ্যই এটি খুলে রাখতে হবে।
৬। ঘুম ও বিশ্রাম
সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে দৈনিক কমপক্ষে ৬-৮ ঘন্টার ঘুম ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন। তবে ব্যক্তি বিশেষে এই চাহিদা কম বা বেশি হতে পারে। কায়িক শ্রম এর ক্ষেত্রে প্রতি ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা কাজের পর ১০-১৫ মিনিট রেস্ট নিতে বলা হয়। এতে শুধু চোখের নয়, পুরো শরীরের বিশ্রাম হয়ে যায়। এবং কম্পিউটার চালানোর ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা ২০-২০-২০ নিয়ম মেইনটেইন করতে বলেছেন। তাদের মতে, ২০ মিনিট একটানা ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর দিকে তাকিয়ে থাকার পর অন্তত ২০ সেকেন্ড ২০ ফিট দূরত্বের কোনো বস্তুর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।
৭। স্বাস্থ্যকর খাবার
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে খাদ্যাভাসে রাখুন ভিটামিন, খনিজ ও নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার। ডিম, দুধ, কমলালেবু, গাজর, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছ, যেমন; রুই, কাতলা, ইলিশ, মাগুর ইত্যাদি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখার চেষ্টা করুন। এই খাবারগুলো আমাদের চোখের স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট উপকারী।
প্রতিটা মানুষের কাছে তাদের চোখ কতটা মূল্যবান তা হয়তো আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। তাই এসব ছোট ছোট বিষয়ের প্রতি খেয়াল রেখে নিজেদের চোখকে রক্ষা করুন দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির হাত থেকে।